মানুষ কী মহাভারতের ঘটোৎকচ কিংবা লিলিপুটের মতো বামন হতে পারে?

বিজ্ঞান

মানুষের আকার কেন ঘটোৎকচের মতো নয়? কেনই বা মানুষ লিলিপুটের গল্পের আকারের নয়! দৈত্যাকার হলেই বা কি লাভ-ক্ষতি? খর্বকার হলেও বা সুবিধা অসুবিধা কোথায়? গল্পের গরু যেখানেই চড়ুক, বিজ্ঞান বলছে বাস্তবে মানুষ কিন্তু ঘটোৎকচ কিংবা লিলিপুট কোনওটাই হতে পারবে না৷
কারণ সাইজ মেটার করে৷ জৈব বৈচিত্রের মধ্যেও আকার একটা বড় বিষয়৷ যে কোনো প্রজাতিরই একটা সবথেকে সুবিধের সাইজ রয়েছে, সেই সাইজ-এ বড় মাপের হেরফের হলে প্রজাতিটার গঠন-ও এক থাকবে না৷ যেমন মহাভারতের ‘ঘটোৎকচ’ কিংবা চাচা চৌধুরী-র বইয়ের ‘সাবু’-কেই ভাবুন না৷ এই দৈত্যাকৃতি মানুষেরা সাধারণ মানুষের থেকে দশ গুণ লম্বাই নয়, সামনে-পিছনে কিংবা আড়াআড়িও সেইরকমই৷ সবসুদ্ধ এদের ওজন তাহলে সাধারণ মানুষের হাজারগুণ অর্থাৎ আশি নববই টন হবে৷ কিন্তু ওদের হাড়ের প্রস্থচ্ছেদ একই হিসেবে সাধারণের থেকে মাত্র একশোগুণ বেশি৷ সব মিলিয়ে দাঁড়ায় যে ওদের হাড়ের প্রত্যেক স্কোয়ার ইঞ্চিকে সাধারণ মানুষের হাড়ের এক স্কোয়ার ইঞ্চি-র দশগুণ বেশি ভার বহন করতে হবে৷ মানুষের উরুর হাড়ে দশগুণ বেশি চাপ পড়লে সেটা ভেঙ্গে যায়৷ অর্থাৎ আমাদের ঘটোৎকচ বা সাবু সত্যিই যদি থাকতেন প্রত্যেক পদক্ষেপে একবার করে তাদের পায়ের হাড় ভাঙ্গতো৷
আরেকটা কারণ মধ্যাকর্ষণ৷ মধ্যাকর্ষণের প্রভাব মানুষের জন্য যেমন নেংটি ইঁদুরের জন্য কিন্তু সমান নয়৷ একটা নেংটি ইঁদুরকে একশো ফুট উচ্চতা থেকে ফেলে দিন৷ সে মাটিতে পড়ে একটু ঘাবড়ে যাবে বটে কিন্তু কিছুক্ষণেই চলতে শুরু করবে, অবশ্যই নিচের জমিটা খুব শক্ত না হলে৷ একটা ধেড়ে ইঁদুর একই অবস্থায় মরে যাবে, মানুষ ভেঙ্গে যাবে আর ঘোড়া থেঁতলে যাবে৷ কারণ পড়ার মুখে বাতাসের প্রতিরোধ পড়ন্ত প্রাণীর প্রস্থচ্ছেদের সাথে সমানুপাতিক৷ প্রাণীটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা প্রত্যেকটাকেই দশ দিয়ে ভাগ করো৷ তার ওজন হাজার ভাগের একভাগ হয়ে যাবে কিন্তু পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল হবে একশো ভাগের এক ভাগ৷ তাই প্রাণীটি ছোট হয়ে গেলে তার ওপর বাতাসের প্রতিরোধ কমবে একশো ভাগ কিন্তু মাধ্যাকর্ষণের টান কমবে হাজার ভাগ৷ সুতরাং ক্ষুদ্র জীবের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে বাতাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা মাধ্যাকর্ষণের তুলনায় দশ গুণ বেশি৷
এছাড়াও, অক্সিজেন শোষণ, খাদ্যের চাহিদা, রক্ত প্রবাহের চাপ ইত্যাদি অনেক কিছু নির্ভর করে প্রাণীর আকারের উপর৷ সবমিলিয়ে মনুষ এখন তার ব্যালেন্স আকারেই আছে বলে মনে করছে জীব বিজ্ঞান মহল৷