মাসিক দু’শো টাকারও কম জমিয়ে একদিন আপনিও যেভাবে হতে পারেন লাখপতি

টাকাকড়ি লেনদেন

সঞ্চয়ের একটা মানসিকতা লাগে৷ আর লাগে ধৈর্য৷ দীর্ঘদিন একটু একটু করে সঞ্চয়ের ধৈর্য৷ এমন কিছু সাধারণ নিয়ম আপনি যদি নিয়মিত মেনে চলেন, তাহলে সহজেই একটা নির্দিষ্ট সময় পর লাখপতি হতে পারবেন৷ লক্ষ্যে অবিচল থাকলে নির্ধারিত সময় পর ১০ লাখ টাকার মালিক হওয়া অসম্ভব কিছু নয়৷ সে জন্য শুধু মানতে হবে সঞ্চয়ের কিছু সাধারণ নিয়ম৷
কীভাবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে ভবিষ্যতে লাখপতি হওয়া যায়, সে সম্পর্কে অনলাইনে অনেক পদ্ধতি পাওয়া যায়৷ সেখানে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ভালো ধারণা পেতে পারেন৷ অবসরে যাওয়ার পর মানুষ যাতে অর্থকষ্টে না পড়ে, সেটাই হলো এ ধরনের বিনিয়োগের উদ্দেশ্য৷
একজন সঞ্চয়কারী প্রতি মাসে কত টাকা জমালে লাখপতি হতে পারবেন, সে সম্পর্কে একটি নিবন্ধ সিএনএন-এ প্রকাশ করা হয়েছিল৷ সেখানে বলা হয়, কেউ যদি মাসে ১৭৫ ডলার করে নিয়মিত সঞ্চয় করেন, তাহলে চল্লিশ বছর পর তিনি লাখপতি হতে পারবেন৷ তবে এ জন্য সঞ্চয়কারীকে এমন খাতে বিনিয়োগ করতে হবে, যেখান থেকে ১০ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যাবে৷
আপনি যত সঞ্চয় ও বিনিয়োগ কর্মসূচি সম্পর্কে খোঁজ নেবেন, তাতে দেখবেন, সবই দীর্ঘমেয়াদি হয়৷ জীবন বিমা করতে গেলে ১৮ বছর মেয়াদি, ডিপিএস করতে গেলে ১০ বছর মেয়াদি ইত্যাদি৷ তাই আপনি যেকোনো সঞ্চয় ও বিনিয়োগ পরিকল্পনাই করুন না কেন, সব সময় মাথায় দীর্ঘ সময়ের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে৷ এতে দুইটা সুবিধা হবে৷ প্রথমত, অল্প অল্প সঞ্চয় সহজসাধ্য হবে৷ দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ সময় পর বড় একটা অঙ্ক জমবে৷
আপনার কাছে ১৭৫ টাকা যদি অতি নগণ্য মনে হয়, তাহলে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী তা বাড়িয়ে নিন৷ এতে আপনার রিটার্নের পরিমাণ বাড়বে৷ আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, মাসে যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে সংসার খরচের পর হাতে কিছুই থাকে না৷ সঞ্চয় করব কীভাবে? এই মনোভাবের কারণে বছরের পর বছর চলে যায়, কিন্তু টাকা জমানো আর হয় না৷ এ জন্য বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, আপনি এখন যে বয়সে এবং যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন, যা পারেন তা-ই সঞ্চয় করুন৷ সময়ের সঙ্গে আপনার আয় যখন বাড়তে থাকবে, তখন আপনি সঞ্চয়ের পরিমাণও বাড়িয়ে দিন৷
আয় কম থাকলেও এবং মাস শেষে সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও আপনি যদি প্রতিদিন খুব সহজ একটা অভ্যাস মেনে চলেন, তাহলে মাসে ১৭৫ টাকা জমানো কোনো কষ্টসাধ্য কাজ হবে না৷ এ জন্য আপনি প্রতিদিন ৫ টাকা জমানোর সিদ্ধান্ত নিন৷ তাহলে মাসের ৩০ দিনে ১৫০ টাকা জমবে৷ আর বাকি থাকে ২৫ টাকা৷ আপনি যদি প্রতি সপ্তাহে বাজার করে আরও পাঁচ টাকা জমান, তাহলে ৪ সপ্তাহে জমবে ২০ টাকা৷ আর বাকি ৫ টাকা আপনি ৩০ দিনের মধ্যে যেকোনো একদিন জমালেই মাসে ১৭৫ টাকা জমানো হয়ে যাবে৷
আপনি দিনের শুরুতে বা অফিস থেকে ফিরে এই টাকা জমাতে পারেন৷ কোয়ান্টামে একটা কথা বলে, ‘দিন শুরু করুন দানে’৷ তেমনি আপনি টাকা জমানোর ভালো লাগা দিয়ে দিন শুরু করতে পারেন৷ তবে আপনার যদি ছেলেমেয়ে থাকে, তাহলে একটা মাটির ব্যাংক কিনতে পারেন এবং ছেলেমেয়ের হাতে এই টাকা দিয়ে তাদের মাধ্যমে জমাতে পারেন৷ এতে করে ছেলেমেয়ের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠবে এবং তারা যখন বড় হবে, তখন হাতে অল্প টাকা থাকলেও তা থেকেই তারা সঞ্চয়ের চেষ্টা করবে৷
এখন আপনার মনে প্রশ্ণ আসতে পারে, মাসে এই ১৭৫ টাকা জমিয়ে কোথায় রাখব? এই টাকা থেকে কীভাবে ১০ শতাংশ মুনাফা পাব, যার মাধ্যমে ৪০ বছরে লাখ টাকার মালিক হওয়া যাবে? এর সহজ সমাধান হলো, আপনার আশপাশে যে ডাকঘর আছে, সেখানে গিয়ে একটা সাধারণ হিসাব খুলবেন৷ ডাকঘরে সঞ্চয়ে এখনও সবচেয়ে বেশি সুদ দেওয়া হয়৷
এভাবে জমিয়ে যখন পাঁচ হাজার টাকা হবে, তখন আপনি ডাকঘরেই মেয়াদি হিসাবে সেই টাকা বিনিয়োগ করুন৷ সাধারণ হিসাবে যদিও কিছু কম হারে সুদ পাওয়া যায়, কিন্তু মেয়াদি হিসাবে আপনি বেশি রিটার্ণ পাচ্ছেন৷ তাই আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত, যত দ্রুত সম্ভব সাধারণ হিসাব থেকে আপনার সঞ্চয় মেয়াদি হিসাবে বিনিয়োগ করা৷ এভাবেই অল্প অল্প করে এগোলে ৪০ বছর পর আপনি হয়ে যাবেন লাখপতি৷