লিভার স্মার্ট রাখতে

জীবনতরী ভালো থেকো

এরপর যদি জানতে পারেন আপনার লিভারে চর্বি জমেছে, ডাক্তারের চেম্বারে ছোটার আগে দৌড়ান, হাঁটুন বা জগিং শুরু করে দিন। একইসঙ্গে আলোচনায় বসুন নিউট্রিশানিস্ট এর সাথেও।

রান্নার তেল আর লিভারের চর্বির সাথে একটা সম্পর্ক আছে বৈকি। অনেক প্রকার তেলই তো আছে বাজারে। এই প্রকারভেদ থেকে ভালোটা বেছে নেয়াই হচ্ছে সমস্যা থেকে দূরে থাকার প‌ক্ষে যথেষ্ট নয়। দরকার হচ্ছে রান্নায় তেল ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণও।

না বন্ধুরা। একথা রান্না শেখানোর জন্য বলছি না। কি ছু রোগীদের কিভাবে চিকেন রাঁধলে পেটে গ্যাস হবে না তা নলে থাকলেও মহিলাদের রান্না শেখাতে যাবার দুঃসাহস করব না।

অনেকেই রান্নায় জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করেন শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য। তবে হয়তো এদের মধ্যে অধিকাংশ জানেন না, কেমন করে ঠিকঠাক কাজে লাগে এই তেল। আসলে রান্নার তেল ব্যবহারের থেকে জরুরী সঠিক পরিমাণে আগুনের আঁচ ব্যবহার করা। অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত আঁচে, যেকোন তেলেই ভাজাভুজি করা হোক না কেন, তা যথেষ্ট বিপদ লিভারের জন্য। আসলে কম তেলে ভাজা হলেও আগুনের বেশি আঁচ তেলে উপকারি ফ্যটকে ক্ষতিকারক ট্রান্স ফ্যাটে পরিণত করে যা আমাদের শরীরের জন্য মোটেও সুবিধার নয়। সবথেকে ভালো যদি বুকে পাথর চাপা দিয়েও তেলেভাজা খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখা যায়। তারপরেও যদি এই কঠিন কাজটি প্রায় অসম্ভব ঠেকে, তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে খাবার ডিপফ্রাই অর্থাৎ কড়া ভাজা শুধুমাত্র কাচ্চি ঘানি সরিষার তেলে যাতে করা হয়। সরিষার তেলে স্মোকিং পয়েন্ট বেশি হওয়ায় ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয় সামান্য পরিমানে যা হৃদয় ও লিভারের পক্ষে কম ক্ষতিকর। অতিরিক্ত আগুনের আঁচে ভাজা করা খাবার সুস্বাদু ঠেকলেও, আড়ালে আমাদের শরীরের ভেতর কঠিন ব্যামোদের গ্রীণ সিগন্যাল দেবার কাজ করে বৈকি!

আমাদের প্রতিদিনের খাবারে চর্বির পরিমান যথাসম্ভব কম থাকার ব্যাপারটি অবশ্য অনেকেই কমবেশি খেয়াল রাখতে শুরু করেছেন। কম চর্বির সাথে সংযমিত কার্বোহাইড্রেটের উপস্থিতি, বিশেষজ্ঞদের মতে অনেকটাই ভালো। ডাক্তারবাবুরা বলছেন এতে সরাসরি লিভারে ফ্যাট জমা অর্থাৎ অতিরিক্ত চর্বির উপস্থিতির সম্ভাবনা অনেকটাই কম করে দেয়। ভাজাভুজি তো বটেই, বাদ দিতে হবে ঘি’কেও। প্রতিদিনের খাদ্যাভাস আমূল পরিবর্তনের চাইতে, তারমধ্যে কিছু নির্দিষ্ট খাবারের বদল অনেকটাই প্রভাব ফেলে রোজকার জীবনে। লিভার সুস্থ থাকে।

ময়দা জাতীয় খাবার থেকে আটার তৈরি রুটি বেশ ভালো শরীরের জন্য। তাজা ফলফসারি অনেকটা সাহায্য করে শরীরে পুষ্টির নিয়মিত যোগান দিতে। সম্পূর্ণ আলাদা পদ্ধতিতে তৈরি ‘স্পেশাল ডায়েট’ কোনভাবেই ঘরের সাধারণ উপাদানযুক্ত খাদ্য তালিকা থেকে বিশাল ফারাক হতে পারে না। যেটা সবথেকে জরুরি সেটা হলো নিয়মিত শরীরচর্চা। ডাক্তর-বদ্যি, ওষুধপত্তর, নানা আধুনিক ল্যাবের রিপোর্ট আদৌ  ততটুকু কাজে আসে না, যতটুকু নিয়মিত শরীরচর্চা প্রভাব ফেলে লিভারে জমে থাকা চর্বির পরিমাণ কমিয়ে আনতে। চিকিৎসকের ঘাড়ে ফ্যাটি লিভার ঠিক করার দায় চাপিয়ে আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা জি-বাংলা ও স্টার জলসা দেখে চললেন ও দাদাবাবু ২৪ ঘন্টায় কুতর্ক ও ব্যাভিচারী বাবাদের কুকর্মের নিউজ উপভোগ করে চললেন, না এভাবে হবে না। ঠিকঠাক খাদ্য তালিকা ও শরীরচর্চাই লিভারে অতিরিক্ত জমা চর্বি কমিয়ে ফেলার মূল চাবিকাঠি।

 

ডা অমিতাভ রায়

6,896 thoughts on “লিভার স্মার্ট রাখতে